"খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ)" মুসলিম জাতির এক অপ্রতিরোধ্য সেনাপতি - ইসলামে যুদ্ধের কাহিনী

আবু সুলায়মান অর্থাৎ 'খালিদ ইবনে ওয়ালিদ' তিনি ছিলেন মুসলিম ইতিহাসের বীরত্ব গাঁথা এক মহান সেনাপতি। তিনি ইসলামের হয়ে প্রতিটি যুদ্ধে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ ও শত্রুদের জন্য খুবই হিংস্র। তিনি ছিলেন কাফের, মুশরিক, ভন্ড নবী, পারস্য সাম্রাজ্য, রোমান সাম্রাজ্য তথা বাইজানটাইন শত্রুদের জন্য আতংকের নাম। তাঁর এই অকুতোভয় সাহস ও যুদ্ধ কৌশল ইসলামে ছিল অতুলনীয়।


খালিদ ইবনে ওয়ালিদ কে ছিলেন, ইসলামে যুদ্ধের ইতিহাস 


খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) তিনি মক্কার কুরাইশ বংশের প্রভাবশালী মাখজুম গোত্রে (আনুঃ ৫৮৫-৫৯২) খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ওলিদ ইবনে মুগিরাহ। ওলিদ ইবনে মুগিরাহ তিনি ছিলেন ইসলামের চরম শত্রু। ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে তরুণ খালিদের নেতৃত্বে ওহুদের যুদ্ধে মক্কার কুরাইশরা মুসলিমদের পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে ওয়ালিদের বীরত্ব প্রকাশ পায়।


খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) তিনি ছিলেন মেসোপোটেমিয়া ও সিরিয়া বিজয়ী একজন বিখ্যাত আরব সেনাপতি। তাঁর এই বীরত্বের জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে "সাইফুল্লাহ" নামে উপাধি দেন। সাইফুল্লাহ শব্দের অর্থ হলো 'আল্লাহর তরবারী।'


খালিদ ইবনে ওয়ালিদ তিনি একজন আক্রমণাত্নক সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অতঃপর তাঁর সাহস, শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা ইসলামের কল্যাণে কাজে লাগায়। ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নির্দেশে তিনি ভন্ড নবী মুসায়লিয়াকে হত্যা করেন। এটা দেখে তাঁর অনুসারীরা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেন। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নেতৃত্বাধীন বাইজানটাইন সেনাদলকে পরাজিত করে তাঁর বিজয়ের সুত্রপাত ঘটায়।


একই সময়ে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ আল আসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিন মুসলিম বাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে আজনাদাইন নামক স্থানে ঘটিত যুদ্ধে বাইজানটাইনকে পরাজিত করে সিরিয়া ও দামেস্ক শহরকে তাঁর অধীনে নিয়ে আসেন।



তাঁর এই বিজয় ধারাবাহিকভাবে ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি সবসময় ইসলামের বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করতেন। আর তিনি চাইতেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হতে। কিন্ত তিনি বরাবর কোনো যুদ্ধেই কখনো হারেননি।


একদিন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলেন। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ  এমতাবস্থায় স্ত্রীকে বললেন, প্রিয়তমা স্ত্রী আমি বেশিক্ষণ বাঁচবো বলে মনে হচ্ছে না। তুমি আমার সারাটা শরীর পরীক্ষা করে দেখ, এমন কোনো স্থান কি আমার শরীরে আছে যেখানে শত্রুর তরবারীর আঘাত নেই?


অনেক্ষন সময় অপেক্ষা করে স্ত্রী জবাব দিলেন, ‘না' নেই। আল্লাহ'র রাস্তায় আপনি এত এত বেশি যু'দ্ধ করেছেন যে, আপনার সারাটা শরীরেই শত্রুর আঘাত রয়েছে।


খালিদ ইবনে ওয়ালিদ তখন দুঃখ নিয়ে বললেন, আল্লাহ'র কসম প্রতিটা জিহাদে আমার নিয়ত থাকতো, আমি যেনো যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর আঘাতে শেষ হয়ে যাই। তাতে যেন শহীদের মর্যাদা আমি পাই। কিন্তু আফসোস দেখ, আজ যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু না হয়ে আমার মৃত্যু হচ্ছে আমারই বিছানায়! আমায় কি আল্লাহ শহীদদের মাঝে রাখতে চান না? শহীদের মর্যাদা দিতে চান না?


স্বামীর আফসোস দেখে স্ত্রী কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলেন। এরপর বললেন আপনার নাম স্বয়ং রাসুল (সাঃ) রেখেছিলেন 'সাইফুল্লাহ' অর্থাৎ আল্লাহ'র তরবারী। এমন কোনো তরবারী কি দুনিয়ায় আছে যেটা আল্লাহ'র তরবারীর মোকাবিলা করতে পারে? তাইতো ময়দানে আপনার মৃত্যু হয়নি কারণ আল্লাহ তার তরবারী মাটিতে লুটিয়ে যেতে দেননি। তিনি তাঁর তরবারিকে সমুন্নত রেখেছেন। অক্ষত রেখেছেন।



খালিদ ইবনে ওয়ালিদ তিনি ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা। তিনি ছিলেন অকুতোভয়। যার ভয়ে কাফেরদের অন্তরে ভূমিকম্প শুরু হতো। তিনি তাঁর সাহসীকতা যুদ্ধ কৌশল ইসলামের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন। তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে অনেক ভূখন্ড জয় করেছেন। আর এই ভূ-খন্ডকে তিনি ইসলামের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন।


এই অকুতোভয় সাহসী বীর যোদ্ধা বিজিত ভূখন্ডের অনেকাংশের শাসনকর্তা ছিলেন। ৬০ হিজরী তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ভূখন্ডের শাসনকর্তা হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবশেষে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ২২ আগস্ট, ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে একজন বিজয়ী হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চলে গেলেন কিন্ত প্রতিটি মুসলিম জীবনে তিনি একজন সফল যোদ্ধা হিসেবে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। বিশ্বের ইতিহাসে এই সাহসী বীর যোদ্ধার নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে, "খালিদ ইবনে ওয়ালিদ"।


  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) ব্যবহার ইসলামে হালাল নাকি হারাম। এছাড়া এই প্রযুক্তিকে ইসলাম সমর্থন করে কি না? বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন