আজকের এই আধুনিক যুগে, তথ্য প্রযুক্তির যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) এটি কোন ভবিষ্যৎ গল্পকাহিনী নয়। এটি বর্তমানে আধুনিক যুগের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যা আমাদের জীবন পরিচালনার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গুগুল ম্যাপ, ফেসবুক, ইউটিউব এছাড়া বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। কিন্ত প্রযুক্তির এই অসাধারণ উন্নয়নের মাঝেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: ইসলাম কি এআই (AI) প্রযুক্তিকে সমর্থন করে? ইসলামে মুসলিমদের জন্য এআই (AI) ব্যবহার হালাল নাকি হারাম? আজকে এই পোস্টে কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
এআই (AI) কী? এআই (AI) বলতে কী বোঝায়?
![]() |
ai and islam, ai and islamic education |
এআই (AI) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence) যার অর্থ হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অর্থাৎ এটি হলো এমন এক প্রযুক্তি বা যন্ত্র যার কাজ মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা বিভিন্ন উপায়ে উপস্থাপন করে উন্নত থেকে উন্নত পরিসরে নেওয়া।
অর্থাৎ এআই (AI) বলতে বুঝায়, এটি এমন এক প্রযুক্তি যা মানুষের মত করে চিন্তাভাবনা, শিখতে ও লেখালেখি করতে পারে এবং তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের জীবনকে সহজ, উন্নত ও গতিময় করা। কিন্ত এই প্রযুক্তিরও কিছু ভাল ও খারাপ দিক রয়েছে। নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) কত প্রকার ও কি কি?
বর্তমানে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে এআই (AI) কত প্রকার ও কী কী। তাই এআই (AI) কে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। এক. ক্ষমতা (Capability) ও দুই. কার্যকারীতা (Functionality).
আবার এই দুইটি ভাগকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন: ক্ষমতা (Capability) কে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. সাধারণ এআই (General AI)
২. সংকীর্ণ এআই (Narrow AI) এবং
৩. অতি বুদ্ধিমান এআই (Super-Intelligent AI)
আবার কার্যকারিতা (Functionality) কে চারটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. প্রক্রিয়াশীল মেশিন এআই (Reactive Machine AI)
২. স্বল্প স্মৃতিময় এআই (Limited Memory AI)
৩. মনতত্ত্ব এআই (Theory of Mind AI) এবং
৪. আত্ম সচেতন এআই ( Self Aware AI)
ইসলামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর হালাল ব্যবহার:
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে যা মানুষের জন্য উপকারী, ব্যবহারযোগ্য, সহজলভ্য ও ইসলাম পরিপন্থী নয় তাই মূলত হালাল। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) এর ব্যবহার, উদ্দেশ্য ও ফলাফল যদি মানবজাতির জন্য সহজলভ্য, কল্যাণকর ও ব্যবহার উপযোগী হয় আর যদি ইসলাম পরিপন্থী না হয় তাহলে মুসলিম জাতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) প্রযুক্তির হালাল ব্যবহার করতে পারবে। আর এটাকে ইসলাম সমর্থন করে। যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে হালালভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিম্নরূপ:-
জ্ঞানার্জন এর ক্ষেত্রে: ইসলামে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ ও একটি ইবাদত। তাই এআই ব্যবহার করে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত পড়তে পারবে। তার ব্যাখা ও তাফসীর সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। ইচ্ছানুযায়ী আয়াত নিয়ে গবেষণা করতে পারবে। এছাড়াও বিভিন্ন হাদিস সম্পর্কে জানতে পারবে যা তাদের অল্প সময়ে খুব দ্রূত সঠিক ফলাফল এনে দিতে পারে।
ইসলামিক ইতিহাস, ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প, ফিকাহ, আরবী ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রেও এআই এর সঠিক ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোন তথ্য যাচাই করা যায়। যেমন বিভিন্ন হাদিস সম্পর্কে সঠিক রেফারেন্স পাওয়া যায়। তাছাড়া জাল হাদিছ সম্পর্কেও সঠিক ধারণা দিয়ে থাকে ও চিহ্নিত করে দিয়ে থাকে। যা অল্প সময়ে সঠিক তথ্য পেয়ে খুবই উপকৃত হওয়া যায়।
স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক কল্যাণের ক্ষেত্রে: ভবিষ্যতে মানবজাতির জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানেও গুরুত্বপূর্ণ চমক আনতে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI)। যেকোনো রোগ শনাক্তকরণে, তার চিকিৎসা পদ্ধতি ও ট্রিটমেন্ট সহ সব তথ্যই নির্ভূলভাবে জানাতে পারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI)। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়াও যেকোনো দূর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে উদ্ধারকাজ, ত্রাণ কার্যক্রম ও বিভিন্ন সহযোগীতার ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই কে পরিচালনা করা যাবে।
অতএব আমরা বলতে পারি যে, উপরোক্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) প্রযুক্তিকে হালালভাবে ব্যবহার করতে পারবো। ও এটিকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সহায়ক হিসেবে কাজে লাগাতে পারব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই মানুষের সহায়ক হিসেবে কাজ করায় ইসলাম এটিকে সমর্থন করতে পারে।
- 'ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প' পড়তে এখানে ক্লিক করুন
- নবী-রাসূল ও সাহাবীদের জীবনী - পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইসলামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর হারাম ব্যবহার:-
ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর, ব্যবহারের অযোগ্য, অন্যায়ের সাথে জড়িত ও ইসলামের বিধান পরিপন্থী তাই মূলত হারাম। সেইক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর উদ্দেশ্য, কৌশল ও ব্যবহার যদি ইসলাম পরিপন্থী হয় তাহলে এটি অবশ্যই হারাম। আর এটিকে ইসলাম কখনই সমর্থন করে না। নিচে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর কিছু হারাম ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:-
আত্মগোপনীয়তা লঙ্ঘন: প্রত্যেক মানুষের আত্মগোপনীয়তা রক্ষা করা মৌলিক অধিকার। যদি এআই (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অধিকার লঙ্ঘন হয় তাহলে অবশ্যই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হারাম হবে।
যদি এই প্রযুক্তি মানুষের অজান্তে তথ্য সংগ্রহ করে গোপনে তা নজরদারি করে এছাড়া ছবি, ভিডিও ও ভয়েস রেকর্ড এগুলো বিশ্লেষণ করে তাহলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হারাম। কেননা এই প্রযুক্তি মানুষের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে। এক্ষেত্রে ইসলাম এআই (AI) প্রযুক্তিকে সমর্থন করে না।
মানুষের ক্ষতি করার উদ্দেশ্য: যদি এই প্রযুক্তির উদ্দেশ্য বা কৌশল হয় মানুষের ক্ষতি সাধন করা, তাহলে এআই (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার হারাম হবে।
কেননা বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসভাবে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্বান্ত গ্রহণ করতে পারে তাহলে এটাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যদি মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া, বা তার জন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও চাকরির ক্ষেত্রে সিদ্বান্ত গ্রহণ ক্ষমতা তার উপর ন্যস্ত থাকে এতে কর্মজীবী মানুষ বরখাস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলেও এটি ব্যবহার হারাম হবে। আর এটাও ইসলাম পরিপন্থী যা ইসলাম সমর্থন করে না।
আমরা বলতে পারি, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে। তবে এটির ব্যবহার যদি ইসলাম পরিপন্থী হয়, মানুষের গোপনীয়তা লঙ্ঘনে বাধা, যুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ এর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মানুষের দেহের অশ্লীল ছবি বা ভিডিও এছাড়া ব্যক্তিগত গোপন তথ্য বা নতী ফাঁস ও এনালাইস্ট করে তাহলে অবশ্যই এই প্রযুক্তি ব্যবহার হারাম হবে। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না।
উপসংহার: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত-
আমি বুঝতে পারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর চাহিদা দিনদিন যেভাবে বাড়ছে ভবিষ্যতের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি বিদ্যমান। প্রতিটি প্রযুক্তির ভাল খারাপ দুইটি দিক থাকে। এর ক্ষেত্রেও তাই। যদি আমরা চাই তাহলে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই (AI) কে আমরা হালালভাবে ব্যবহার করতে পারি। বিভিন্ন কাজে এটিকে ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারি। তেমনিভাবে অনেক অসাধু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী আছে যারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করে। আর মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করে।
মূলত এই প্রযুক্তি আমরা ভাল কাজে ব্যবহার করলে আমরা উপকৃত হবো আর খারাপ কাজে ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবো৷ এটা নির্ভর করে যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে সে কোন কাজে এটা ব্যবহার করবে তার উপর। এই প্রযুক্তি নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না৷ বরং মানুষ এটাকে যা নির্দেশ দেয় তাই করার চেষ্টা করে। সুতরাং বলা যায় যে, এই প্রযুক্তির হালাল ও হারাম দুটি দিকই আছে। আমরা এটাকে কীভাবে ব্যবহার করব তা সম্পূর্ণ আমাদের ইচ্ছা। এটাকে হালাল কাজে ব্যবহার করলে ইসলাম সমর্থন করবে আর হারাম কাজে ব্যবহার করলে ইসলাম সমর্থন করবে না এটাই স্বাভাবিক।
- এখানে আরও কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে ইসলামিক তথ্য প্রদান করা আছে, যা মানব জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করুন