আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
আজকে আমি এই গল্পের মাধ্যমে জানাতে যাচ্ছি যে, মানুষের মন বড়ই দুর্বল। অল্প দুঃখ-কষ্টেই ভেঙ্গে পড়ে। হতাশ হয়ে পরে, ধৈর্য্য শক্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্ত তাদের জানা নেই ইসলামে ধৈর্যের গুরুত্ব কতটা। কেননা দুঃখের পরেই সুখ আসে। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা বলেন: "নিশ্চয়ই দুঃখের পরেই সুখ আসে।" (সূরা আল ইনশিরাহ: আয়াত নং ৬)
![]() |
ইসলামে ধৈর্যের গুরুত্ব, বাংলা গল্প, শিক্ষনীয় গল্প |
গল্পের বিস্তারিত: এক দেশে ছিল এক সৎ ও ন্যায়পরায়ণ রাজা। তার চাল-চলন, আচার-ব্যবহার খুবই মার্জিত হওয়াই তাকে রাজ্যের সবাই খুব সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো। কিন্ত তিনি দীর্ঘদিন তার রাজ্যের উন্নয়নের কাজ-কর্ম নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন। বহুদিন ধরে তিনি রাজ্যের বাহিরে ও কোথাও ঘুরতে না যাওয়ার কারণে তার মেজাজ সবসময় খিটখিটে হয়ে থাকত। তাই তিনি একদিন স্থির করলেন তিনি কোথাও ঘুরতে যাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ।
তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এবার নৌকা ভ্রমণে বের হবেন। আর তার সাথে রাজ্যের সকল বড় কর্মকর্তা ও সহোদর রাও যাবে। কিন্ত রাজার একজন গোলাম ছিল। গোলামটি মূলত রাজার ব্যক্তিগত কাজ ও তাকে দেখাশুনা করতো। তাই তার ইচ্ছা তার গোলামকেও নিয়ে যাবেন।
কিন্ত গোলামটি ছিল খুবই ভীতু প্রকৃতির। যেকোনো বিষয় নিয়ে সে খুব ভয়ে থাকতো। সে যখন জানতে পারলো রাজার সাথে সে নৌভ্রমনে যাবে, তখন থেকেই সে খুব মন মরা হয়ে থাকতো। কারণ সে এমনিতেই খুব ভয় পায়। পানিকে তো আরও ভীষণ ভয় পায়। কিন্তু রাজা তার এই ভয়ের কথা কিছুই জানতেন না।
এরপর ঢাকঢোল পিটিয়ে, মহা আয়োজনসহ বাদশাহ নদী ভ্রমণের জন্য যাত্রা শুরু করলেন। সমুদ্রতীরে পূর্ব থেকেই একটি নৌকা সাজানো রয়েছে। নৌকাটি সাজানো হয়েছে ভীষণ যাক-যমক ভাবে। যা দেখে রাজা অত্যন্ত খুশী হলেন।
- এক পর্দাশীল নারীর আশ্চর্যজনক ঘটনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নৌকাটির কাছে যেয়ে রাজা প্রফুল্ল মনে সবাইকে নিয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন। এরপর ধীরে ধীরে নৌকা চলতে লাগলো। নৌকাটি চলতে চলতে নদীর বুক চিরে মাঝ দরিয়ায় এগিয়ে গেলো। তখনি নদীর অন্তরঙ্গ ঢেউ। ঢেউয়ের সাথে সাথে নৌকাও দুলতে থাকে। আর এতে করে রাজাসহ সবাই আনন্দ উৎফুল্লে মেতে ওঠে।
কিন্তু সবার মনে যখন আনন্দের ঢেউ বইতে লাগলো, তখন বাদশাহর গোলামের মন ভয়ে একেবারে পাথর হয়ে গেলো। গোলামটি ভীষণ ভয় পাচ্ছিলো। আর সে ভাবছিল কি করবে..! মনে মনে ভয়ে তার ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো।
কিন্ত কি আর করার...! সবাই যেখানে ঢেউয়ের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করছিলো ঠিক তখনি গোলামটি ভয়ে কান্না শুরু করলো। আর সাথে ভীষণ চিৎকার। কোনো ক্রমেই তার কান্না থামানো যাচ্ছিলো না। সবাই পড়লো এক মহাবিপাকে। বাদশাহর মেজাজ তো এমনিতেই নাজুক। তার নদী ভ্রমণ এখন মাটি হওয়ার উপক্রম হলো।
তখন বাদশাহ তাকে নিয়ে খুবই অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন।
কিন্ত বাদশাহর সফর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন একজন হাকিম। আর হাকিম মানে হল বুদ্ধিমান ব্যক্তি বা জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনি তখন নৌকার এক কোনায় থেকে সব দেখছিলেন। সবাই যেখানে গোলামের কান্না থামাতে ব্যর্থ হলো তখন তিনি মুখ খুললেন।
বিনীতভাবে আরজ করলেন, বাদশাহ নামদার, অনুমতি পেলে আমি অতি সহজেই এই বেকুব গোলামের কান্না থামাতে পারি। বাদশাহ তখন জবাব দিলেন, তাই নাকি...!! তাহলে এখনো থামাচ্ছেন না কেনো ...!! নির্দ্ধিধায় আপনি আপনার কৌশল প্রয়োগ করুন। আর এই বিপদ থেকে আমাদের উদ্ধার করুন।
- জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত কী? তা জানতে এখানে ক্লিক করুন
- মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বাচ্চাদের সাথে কেমন ছিলেন জানতে ক্লিক করুন
বাদশাহর হুকুম পেয়ে হাকিম আর দেরী করলেন না। তিনি দ্রুত গোলামটির বাবরি চুলগুলো ধরে তাকে সমুদ্রের মধ্যে ঠেসে ধরলেন। কিছুক্ষণ ঠেসে ধরে তাকে আবার ভাসিয়ে আনলেন। এবার বেকুব গোলামের চিৎকার বন্ধ হল। একেবারে চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে রইলো সে।
হাকিমের এই কান্ড দেখে বাদশাহ তো একেবারেই হতোবাক। তিনি আনন্দিত হলেন ও হতবাকও হলেন। হাকিমকে ঢের বাহবা দিলেন তিনি।
এরপর বিস্মিত কন্ঠে বললেন, 'এভাবে চিৎকার বন্ধ হওয়ার রহস্যটা কি তা এবার খুলে বলুন।'
উত্তরে হাকিম বললেন, বাদশাহ নামদার! এর পূর্বে তো এ গোলাম কখনো নদীতে ডুবে যাওয়ার বিপদ অনুভব করেনি, সমুদ্রের বিপদ দেখেনি। ফলে সে নৌকার উপকারিতা ও সমুদ্র ভ্রমণের আনন্দ সম্পর্কে বুঝতে পারিনি। এবার সে সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার বিপদ অনুভব করেছে আর নৌকার উপকারীতা বুঝতে পেরেছে। কারণ বিপদে না পড়লে শান্তির উপকারীতা অনুভব করা যায় না। তেমনিভাবে দুঃখ না এলে সুখের মর্ম বোঝা যায়না।
উপরোক্ত গল্প হতে শিক্ষনীয় বিষয় হলোঃ
ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর উপর ভরসাঃ জীবনে দুঃখ না এলে সুখকে অনুভব করা যায়না। মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসবেই, তাতে হতাশ হওয়া যাবে না। বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, আর আল্লার উপর ভরসা করতে হবে। তাঁর কাছে সুখের জন্য ফরিয়াদ করতে হবে। কেননা, সুখ-দুঃখ আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।
- নফ্সকে নিয়ন্ত্রণ করার চমৎকার উপায় জানতে এখানে ক্লিক করুন
কারন, দুঃখ কষ্টের মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলা। তিনিই সবকিছু নির্ধারণ করেন। একমাত্র তিনিই মানুষের ভাল-মন্দ সম্পর্কে অবহিত। তাই আমাদের সবার উচিত বিপদে ধৈর্য ধারণ করা ও আল্লাহর উপর ভরসা করা।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করুন। (আমিন)