এক পর্দাশীল নারীর আশ্চর্যজনক ঘটনা। ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প - Islamiclife24

ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে মেয়েদের জন্য পর্দাকে (Hijab) ফরজ করা হয়েছে। খোলসের ভিতর যেমনিভাবে মণি-মুক্তা নিরাপদে থাকে ঠিক তেমনিভাবে পর্দার ভিতরে নারীরাও নিরাপদে থাকে। পর্দাশীল নারীকে আল্লাহ সমাজে সম্মানিত করেন আর সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে হেফাজতে রাখেন। আল্লাহর সাহায্য ও রিজিকের অলৌকিকতা নিয়ে এই ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্পটি (islamic educational story) পড়ুন।


এলাকার একটা মসজিদ থেকে দুই-তিনটা বাড়ির পরের একটা বাড়িতে এক ভদ্র মহিলা বসবাস করতো। যেহেতু মসজিদটি ছিলো খুব কাছে তাই ঐ মসজিদ থেকে প্রতিদিন আযানের শব্দ ও জুমু'আর নামাজের খুতবা (Jumu'ah Namajer Khutbah) ভদ্র মহিলাটি ঘর থেকেই শুনতে পেতেন। ভদ্র মহিলাটি ছিলেন অত্যন্ত পর্দাশীল ও নমনীয় চরিত্রের।


educational story, islamic story


মহিলাটি প্রতিটি জুমু'আর খুতবা ও বয়ান (lecture) ঘর থেকে খুব মনোযোগ সহকারে শুনতেন। হুজুরের আলোচনা মহিলার মনকে স্পর্শ করে। তাই তিনি একদিন স্থির করলেন মসজিদের হুজুরকে তিনি দাওয়াত করে খাওয়াবেন।


ইতিমধ্যেই তিনি মসজিদের হুজুরকে দাওয়াত করলেন।


মহিলার বাড়িতে তার স্বামী-সন্তান, আত্মীয়স্বজন কেউই নেই। কীভাবে তিনি হুজুরকে খেদমত করবেন তা নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অপরদিকে মসজিদের হুজুর দাওয়াত পেয়ে তিনি তার দুই অবুঝ সন্তান নিয়ে মহিলার বাড়িতে হাজির হলেন।


মহিলাটি ঘরের ভিতরেই থেকে হুজুরকে ঘরে ঢোকালেন। মহিলাটি পর্দাশীল থাকায়, হুজুরের রুম ও মহিলার রুম এর মধ্যে একটি ভালো মানের পর্দা (curtain) লাগালেন। পর্দার এপাশ থেকে ওপাশে কোনোকিছু আছে কিনা তা বোঝার কোন উপায় নেই।


মহিলাটি পর্দার ভিতর থেকে খাবারের থালাগুলোকে ধাক্কা দিয়ে পর্দার বাহিরে দেন। হুজুর সেখান থেকে খাবার গুলো ঠেনে নিয়ে তার সন্তানদের নিয়ে তৃপ্তি সহকারে খেলেন।


খাওয়া শেষ হওয়ার পর হুজুর বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ করে তার এক সন্তান বলল, "বাবা তুমি এরকম একটা পর্দা আমাদের বাড়িতেও লাগিয়ে দিবে"। তখন হুজুর বলল, কেন বাবা...?


সন্তান বলল, "তুমি দেখলে না, পর্দা আমাদের কত সুস্বাদু , মজার মজার খাবার দিল"! আমাদের বাড়িতে লাগিয়ে দিলে, আমরা বাড়ি থেকেই এই মজার মজার খাবার (well food) গুলো খেতে পারবো।



সন্তানের এই কথা শুনে হুজুর আশ্চর্য হয়ে গেলেন।


তখন হুজুর বলল, "নারে বাবা..! এই পর্দার আড়ালে একজন ব্যক্তি আছেন, যিনি কি না আমাদের এই খাবার গুলো দিলেন"। আর আমরা তৃপ্তি সহকারে খেলাম।


আমরা উপরোক্ত গল্পটি (story) পড়ে দুইটি বিষয়ে শিক্ষা (lesson) নিতে পারি-


(১) আল্লাহ সাহায্যকারী (Allah is the helper) : যদি কোন ব্যক্তি তার ঈমান বাঁচানোর জন্য ও আল্লাহর হুকুম (command) পালনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সাহায্য করেন।


যেমন :- গল্পে পর্দাশীল ভদ্র মহিলাটি কীভাবে হুজুরের খেদমত করবেন তা নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন। আল্লাহ তা'আলা সঠিক পন্থায় তাকে সাহায্য করেছেন।


(২) আল্লাহ রিজিকদাতা (Allah is the provider of Rizq) : পর্দা আমাদের কখনো খাবার দিতে পারে না। তার পিছনে এমন একজন আছেন যিনি কিনা তার রহমত ও দয়া দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।


যেমন :- হুজুরের ঐ অবুঝ সন্তান ভেবেছিলেন পর্দা তাদেরকে খাবার দেয়। সে জানত না যে, পর্দার আড়ালে অন্যকেউ আছেন। যিনি তাদের খাবার দিয়েছেন।


তেমনিভাবে আমরাও মনে করি যে, জমি-জমা, ফসল, চাকুরী ইত্যাদি আমাদের খাবার দেয়, দক্ষ ড্রাইভার আমাদের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচায়, অসুস্থতা থেকে আমাদের ডাক্তার ভালো করে তুলেন। আসলে তার কিছুই নয়। সবকিছুর পেছনে অবশ্যই একজন আছেন।



জমি-জমা, ফসল, চাকুরী, দক্ষ ড্রাইভার ও ভালো চিকিৎসক সবকিছুই হলো ঐ পর্দা। আর এই পর্দার আড়ালে অবশ্যই একজন নিয়ন্ত্রক রয়েছেন। আর তিনি হলেন মহান আল্লাহ (Allah)। তিনি তার অসংখ্য রহমত ও নিয়ামত আমাদেরকে ঠেলে ঠেলে দিচ্ছেন। আর আমরা তা তৃপ্তি সহকারে ভোগ করছি।


এখানে আমরা হলাম ঐ অবুঝ বাচ্চার মতো। কে দিলো তাকে খোঁজ না করে, পর্দার খোঁজ করি। আর ভাবি পর্দায় বুঝি আমাদের খাবার দেয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক, আমিন।


*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন