ছোট বাচ্ছাদের প্রতি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেমন ছিলেন? ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই আল্লাহ তা'আলার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন।


আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শিশুদের সাথে কেমন ছিলেন। এই গল্পটি একটি ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প (islamic educational story). তিনি শিশুদের সাথে ছিলেন খুবই বন্ধুসুলভ। তিনি শিশুদেরকে অনেক ভালবাসতেন ও আদর-স্নেহ করতেন। তিনি কখনই তাদের গায়ে হাত উঠাতেন না, ও তাদের সাথে কঠোর ভাষায় কথাও বলতেন না। তিনি সবসময় তাদেরকে ডেকে তাদের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতেন। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছোট বাচ্ছাদের সাথে কেমন ছিলেন নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-


বিস্তারিতঃ আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) (Muhammad saw) তিনি ছোটদেরকে খুব ভালোবাসতেন। তাদেরকে আদর করতেন, তাদের সাথে মিশতেন, খেলা করতেন এবং নরম ভাষায় তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি কোনো সফর থেকে ফেরার পথে কোন শিশুকে দেখতে পেলে সওয়ারী থেকে নেমে তাকে সওয়ারীতে তুলে নিতেন। নবীজি মসজিদে নামাজে দাঁড়িয়ে কোনো শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলে নামাজ (Namaj) সংক্ষেপ করে দিতেন, যাতে শিশুদের এবং তাদের মায়েদের কষ্ট না হয়। এতে তাঁর সহানুভূতির দারুন এক দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে।


মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প 


প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সামনে কোনো মৌসুমের নতুন ফল আনা হলে তিনি সবার আগে উপস্থিতিদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সের শিশুকে তা দিতেন। তিনি শিশুদের পিঠে ও মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতেন। একবার নবিজী (Prophet Muhammad saw) এভাবে শিশুদের আদর করছিলেন, এমন সময় একজন গেঁয়ো লোক এলো। নবিজীর আদর স্নেহ দেখে সে বলল, "তোমরা শিশুদের আদর কর, অথচ আমার দশটি শিশু সন্তান আছে, আমি কখনো কাউকেই আদর করিনি।"


নবিজী তখন তার কথার জবাবে বললেন, আল্লাহ (Allah) যদি তোমার অন্তর থেকে মায়া মমতা কেড়ে নিয়ে থাকেন, তাহলে আমি আর কি করব...?


আসলে লোকটির ভূল ভাঙ্গিয়ে দেওয়ার জন্যেই নবিজী এভাবে একটু কঠিন ভাষায় তার কথার জবাব দিয়েছেন। নবিজীর কথায় লোকটি নিশ্চয় তার ভূল বুঝতে পেরেছেন।


একদিন এক সাহাবি তাঁর ছোট্ট একটি মেয়েকে নিয়ে নবিজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। মেয়েটির পরনে ছিল লাল জামা, নবিজী ওকে দেখেই বলতে লাগলেন, 'বাহ! 'বাহ! খুব সুন্দর হয়েছে। এরপর মেয়েটি নবিজীর সাথে মিশে আনন্দ করতে লাগলো। এক পর্যায়ে তার ছোট্ট চোখ দুটো চলে গেলো প্রিয়নবীর মোহরে নবুওতের দিকে। মোহরে নবুওয়ত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া নবুওয়তের সীল। যা নবিজীর পিঠ মুবারকের উপরিভাগে কবুতরের ডিমের মতো শোভা পেতো। মেয়েটি তা দেখে দারুন কৌতূহলি হয়ে উঠলো, সে মোহরে নবুওয়তের সাথে খেলতে লাগলো। তখন সাহাবি তাঁর মেয়েকে ধমক দিলেন। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সাহাবিকে বললেন, 'আহা থাক, ওকে খেলতে দাও।'


আরেকবার প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- (prophet Hazrat Muhammad saw) এর দরবারে কয়েকটি কাপড় এলো। তার মধ্যে একটি কালো চাদরও ছিল। কাপড়টির উভয় দিকে ছিল সুন্দর আঁচল। তখন নবিজী উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে প্রশ্ন করলেন, 'এটি কাকে দিবো?' কেউ কোনো জবাব দিলো না। তারপর নবিজী নিজেই বললেন, "উম্মে খালেদকে নিয়ে এসো।" উম্মে খালেদ এলে চাদরটি তাকে পড়িয়ে দিয়ে বললেন, পরবে আর পুরাতন বানাবে, পরবে আর পুরাতন বানাবে।' পরবর্তীতে দেখা হলে নবিজী বলতেন, দেখো কাপড়ে খচিত ফুলগুলো কত সুন্দর। উম্মে খালেদ নবিজীর এই আচরণে খুব আনন্দ পেতো।


সাহাবি হযরত জাবের ইবনে ছামুরাহ (Zaber Ibne Chamurah) তার ছোট্টকালের ঘটনা বর্ণনা করেন, একবার আমি নবিজীর পেছনে নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে তিনি তাঁর ঘরের দিকে চললেন। আমিও সাথে সাথে চললাম। আমাকে যেতে দেখে আরও কয়েকজন শিশুও নবিজীর সাথে চলল। নবিজী সবাইকে খুব আদর করলেন।



এক সাহাবি বর্ননা করেন, আমি খুব ছোটবেলা এক আনসারের বাগানে গিয়ে খেজুর গাছে ঢিল মেরে খেজুর পেরে খেতাম। একদিন হঠাৎ ধরা পড়ে গেলাম। লোকজন আমাকে নিয়ে সোজা নবিজীর দরবারে চলে গেলো। নবিজী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন 'তুমি গাছে ঢিল ছোঁড়ো কেনো?' আমি বললাম, খেজুর খেতে। তখন নবিজী বললেন, যে সব খেজুর গাছ থেকে ঝরে পড়ে তাই কুড়িয়ে খাবে। গাছে ঢিল ছোঁড়বে না। এই বলে নবিজী আমার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন, এবং আমাকে দোয়া করলেন।


তোমরা জেনে থাকবে যে, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- এর সাথে হযরত আয়েশা (রাঃ)- এর যখন বিয়ে হয় তখন তিনি খুব অল্প বয়সী ছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। আর তুলে নেওয়া হয় তখন আয়েশা (রাঃ) এর বয়স হয় নয় বছর। হযরত আয়েশা (রাঃ) তাই নবিজীর ঘরে এসেও অন্য মেয়েদের সাথে খেলতেন। নবিজী তাতেও বাধা দিতেন না। ফলে নবিজী বাইরে কোথাও গেলে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর বান্ধবীরা দল বেধে তাঁর ঘরে খেলতে আসতো।


হঠাৎ যখন নবিজী ঘরে প্রবেশ করতেন তখন তারা দিকবিদিক ছুটে পালাতো। নবিজী তাদেরকে ঢেকে ঢেকে বলতেন, যেয়ো না তোমরা। খেলা করো।


একদিন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কোথাও যাচ্ছিলেন, আদরের দৌহিত্র হুসাইন তখনও খুবই ছোট। নবিজী হুসাইনকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রিয় নানাজানকে দেখে হুসাইন কাছে আসলো। কিন্তু সে সহজেই ধরা দিচ্ছিলো না। শিশুরা এমন দুষ্টামি করে কিন্তু ঢের আনন্দ পায়। অবশেষে একবার নবিজী হুসাইনকে ধরেই ফেললেন। ধরে বললেন, "হুসাইন আমার, আমি হুসাইনের।"


এক সাহাবী তার অন্ধকার জীবনের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জাহেলিয়াতের যুগে আমার ছোট্ট একটি মেয়ে ছিল। আমি আরবের প্রথানুযায়ী তাকে জীবন্ত কবর দিতে নিয়ে যায়। যখন মাটিতে তাকে গেড়ে ফেলেছিলাম তখন সে দু'হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে আব্বা আব্বা বলে চিৎকার করছিল। আর আমি তখনও তার শরীরের উপর মাটি তুলে দিচ্ছিলাম। ও রীতিমতো চিৎকার করে যাচ্ছিল, আর আমি নির্দ্ধিধায় মাটি ফেলে যাচ্ছিলাম। এক সময় ওর ছোট্ট শরীরটা মাটির ভিতর হারিয়ে গেলো। আর তার প্রাণ পাখিটিও উড়ে গেলো।


এই সাহাবীর চরম নিষ্ঠুরতার কথা শুনে নবীর চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে লাগলো। সাহাবির কথা শেষ হলে নবিজী তাকে আবারও ঘটনাটি বলতে বললেন। সাহাবী তার সেই নিষ্ঠুরতার কাহিনী দ্বিতীয়বার শোনালেন। আর নবিজী কাঁদতে লাগলেন। চোখের পানি দিয়ে তাঁর দাড়ি মুবারক ভিজে যাচ্ছিলো।


একবার মদীনায় (Madina) দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। তখন ক্ষুধায় কাতর হয়ে এক বালক ফলের বাগান থেকে ঝরা কয়েকটি ফল কুড়িয়ে খেলো, আর কয়েকটি কাপড়ে গুঁজে নিল। ফেরার পথে মালিক দেখে ফেলল। আর সেজন্য মালিক তাকে আচ্ছামত প্রহার করে তার জামা কাপড় খুলে রেখে দিলো। ছেলেটি অসহায়, কার কাছে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে সে নবিজীর দরবারে হাজির হল। গিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে মালিকের নামে অভিযোগ করলো নবিজীর কাছে। নবিজী ছেলেটিকে শান্তনা দিলেন। তারপর মালিককে ডেকে পাঠালেন। মালিক উপস্থিত হলে তাকে আচ্ছামত শাসালেন। পরে উপদেশের মাধ্যমে লোকটিকে তার অপরাধের কথা বুঝিয়ে দিলেন। মালিক দারুন লজ্জিত হল। আর কখনও এমন আচরণ না করার শপথ নিয়ে বিদায় নিলো।



প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছোটদের (Muhammad saw for kid's) এইভাবে ভালোবাসতেন। যা আমরা উল্লেখিত অনেকগুলো উদাহরণ পড়লাম। আর প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনি কেমন ছিলেন, তিনি শিশুদের সাথে কেমন আচরণ করেছেন, কেমন ভালোবাসতেন, তা আশা করি তোমরা বুঝতে পেরেছো।


শিক্ষনীয় বিষয় হলোঃ আমরা সদা সর্বদা নবিজীর আদর্শ বরণ করার চেষ্টা করবো। কেননা তাতে রয়েছে সুখ, শান্তি, সম্মান ও শ্রদ্ধা। যা মানুষের কাছে সম্মান বয়ে আনে।


কোনো শিশু আমাদের দেখে যাতে ভয় না পায়, বরং আমাদের দেখলে আমাদের কাছে যেনো আনন্দ সহিত এগিয়ে আসে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বদায় তাদের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে।


সুতরাং নবিজী মুহাম্মদ (সাঃ)- এর মত করে প্রত্যেক শিশুকে আমাদের আদর, স্নেহ ও ভালবাসা উচিত। 

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন