ইসলামিক জীবন ধারায় নফ্স (Nafs) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনাকে ডুবাতেও পারে আবার ভাসাতেও পারে। অর্থাৎ, আপনার আমলনামাকে এটি নেক দ্বারা সুসজ্জিত করতেও পারে আবার গুনাহ দ্বারা আপনার আমলনামা বরবাদও করতে পারে। নফ্স! বিষয়টি খুবই জটিল। আর এই জটিল বিষয়টিকে বুঝতে পারা ও বশে আনা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য।
![]() |
নফ্স কী, নফ্স নিয়ন্ত্রণ করার উপায়, islamiclife |
নফ্স (Nafs) একটি আরবি শব্দ (Arabic word), যার অর্থ হলো "সত্ত্বা বা মন"। তারমানে আপনার এই অভ্যন্তরীণ 'সত্ত্বা বা মনই' পারে আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে। এজন্য আমাদের নফ্সকে হেফাযত করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যা আমাদের প্রত্যেকের জন্য খুবই প্রয়োজন।
নফ্সকে নিয়ন্ত্রণ করা বড়ই কঠিন বিষয়। কেননা, এটার পিছনে শয়তানের এক বিশাল কুমন্ত্রণা আঠালোর মতো কাজ করে। সেইক্ষেত্রে আপনাকে অনেক বেশি ধৈর্য্যশীল হতে হবে। নিজের নফ্সকে হেফাযতের জন্য যা যা করণীয়, তার সবগুলোই আপনাকে নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। কেননা আপন নফ্সই পারে, আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে।
- এক পর্দাশীল নারীর আশ্চর্যজনক ঘটনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাই নফ্সকে হেফাযত বা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ও আত্মশুদ্ধি উন্নয়নের জন্য ১৫ টি চমৎকার কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-
১. ফজরের নামাজের পরে না ঘুমানোর অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমানো বা বিশ্রাম করুন। এতে দৈনন্দিন কর্মশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
২. দিনে তিনবারের বেশী খাবেন না। পরিমাণ মতো খাবেন ও অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। ফাষ্টফূড পরিহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। নফ্স নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. প্রয়োজন অনুসারে খাবেন। অর্থাৎ পেটের তিনভাগের একভাগ খাবার, একভাগ পানি দ্বারা পূর্ণ করুন। বাকি অংশ খালি রাখুন। এতে শারিরীক সুস্থতা ও হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৪. অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকুন। আপনার কথা আপনার মনকে পরিশুদ্ধি করে।
৫. সকাল-সন্ধ্যা বা অবসর সময়ে জিকির আযকার বা দুরুদ শরীফ পাঠ করুন। এতে করে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
৬. ইশরাকের সালাত আদায়ের অভ্যাস করুন।
৭. প্রতিদিন কুরআন পড়ার অভ্যাস করুন। এতে মনে প্রশান্তি মেলে।
৮. যত কম পরিমাণে ঘুমানো যায়, তার চেষ্টা করুন। কারণ অতিরিক্ত ঘুম অলসতা বাড়ায়।
৯. ফজরের নামাজের পর শারিরীক ব্যায়াম (Physical Exercise) বা হাটাহাটির অভ্যাস করুন।
১০. চোখের দৃষ্টি ও মনের ভাবনা অবনত রাখুন। তা নাহলে স্থান পরিত্যাগ করুন।
১১. সোস্যাল মিডিয়া (Social media) কম ব্যবহার করুন। অযথা ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কেননা, এটি আপনার মনকে কুমন্ত্রণা দিতে পারে।
১২. প্রতিদিন কুরআন অর্থসহকারে পড়া ও বুঝার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১৩. মুখের হেফাযত করুন। কথা-বার্তার মাঝে মাধুর্য ধারন করুন। অশ্লীল কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
১৪. রাতে ঘুমানোর আগে অযু করে দুইরাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিন। ও ঘুম আসার আগ পর্যন্ত আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকুন। এবং
১৫. সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিয়মিত তাহাজ্জুদ- এর নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ও আল্লাহ কাছে ক্ষমার প্রার্থনা করুন।
- পিঁপড়েরা কীভাবে কাঁচের তৈরি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
অতএব আশা করা যায় যে, উপরোক্ত এই কৌশলগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে আপনি আপনার নফ্স কে হেফাযত করতে পারবেন ও একটি সুখী-সফল ইসলামিক জীবন (Islamic Life) যাপন করতে পারবেন। তাই আমরা নিয়মিত এই আমল গুলো করার ও একটি ইসলামিক জীবন পদ্ধতি গড়ার চেষ্টা করব।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলো মেনে একটি সুন্দর ও সফল ইসলামিক জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন।...(আমিন)